শেয়ারবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বর্তমানে হতাশা বিরাজ করছে। বাজারের পতন থামানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। এতে ক্রেতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তবে বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। গত বুধবার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে পুঁজিবাজার টানা চার দিন বেড়েছিল, তবে এরপর থেকে একটানা পতন দেখা যাচ্ছে। গত দুই দিনের বিরতির পর বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১ পয়েন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ কমেছে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাজার সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা দরপতনে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। অনেকের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি হচ্ছে। যখন শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে যায়, তখন ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে বিনিয়োগকারীদের নতুন অর্থ বিনিয়োগের তাগাদা দেওয়া হয়। যদি বিনিয়োগকারী নতুন অর্থ না দেন, তাহলে তাদের শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করা হয়।
একজন মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, তাতে শেয়ারবাজার পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। তার মতে, বাজারের সবচেয়ে বড় সংকট তারল্য (লিকুইডিটি) সংকট। সুদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে স্পেশাল ফান্ডের মেয়াদ ১৩ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। এই মেয়াদ না বাড়ালে ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হবে।
বুধবার শেয়ারবাজারে দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয় এবং দিনশেষে ডিএসইএক্স সূচক ৫,১৬৯ পয়েন্টে নেমে আসে। ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট কমে ১,৮৯২ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে ১,১৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। মাত্র ৫২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৩০৬টি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে, এবং ৪১টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। মোট লেনদেন হয়েছে ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা কম।
লেনদেনের শীর্ষে ছিল লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার, যার লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। দ্বিতীয় স্থানে ছিল অগ্নি সিস্টেমের ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং তৃতীয় স্থানে ছিল ইসলামী ব্যাংকের ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও সার্বিক সূচক ১২১ পয়েন্ট কমেছে এবং ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮টির দাম বেড়েছে, ১৩১টির দাম কমেছে, এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত ছিল।